ভূমিকা→ ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল ভারতের নবগঠিত সরকার। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে খাদ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রভৃতি দিকে অর্থনৈতিক সংকট দেখা যায়। জাতীয় জীবনে এই সংকটপর্ণ অবস্থায় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ভারতের আর্থিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এই রকম একটি পদক্ষেপ হলো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব→
প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য→ এই পরিকল্পনার সময়কাল ছিল 1951-56 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এর প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য গুলি হল―
(i) খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা
(ii) ভারতে প্রভূত কাঁচা মাল ও খনিজও সম্পদ কে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করা।
(iii) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দেশ ভাগের ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে যে ভারসাম্য হীনতা দেখা দিয়েছিল সেই অর্থনৈতিক ভারসাম্য কে ফিরিয়ে আনা।
(iv) মুদ্রা স্ফীতির চাপ হ্রাস করা।
(v)ব্যাক্তির আয় ও সম্পদের মধ্যে অসমতা হ্রাস করা।
প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব→ এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব গুলি হলো―
(i) এই পরিকল্পনা ছিল নবগঠিত ভারত সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো।
(ii) ভারতীয় আয় বৃদ্ধি পায় (11 শতাংশ) তবে এই প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দেশের প্রকৃত আয় বাড়ে (18 শতাংশ)
(iii) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত প্রায় (430 মাইল) রেল লাইন পুনরর্নির্মাণ করা হয়। তার সঙ্গে আরও (380 মাইল) রেল লাইন সংযুক্ত হয়।
(iv) খাদ্যশস্যের উৎপাদন যেখানে 1951-52 খ্রিস্টাব্দে 52.2 মিলিয়ন টন ছিল তা 1956 খ্রিস্টাব্দে বেড়ে দাড়াই 65.8 মিলিয়ন টন।
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য→ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় খাদ্য ও কাঁচামালের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পর পন্ডিত নেহেরু অর্থনীতিক ক্ষেত্রে সামাজিক কল্যাণ সাধন এবং বে-সরকারি উদ্যোগ উভয় কেই সমান গুরুত্ব দিতে থাকে।
নেহেরুর আদর্শকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট এর প্রখ্যাত পরিসংখ্যান বিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলা নবীশ 1956-1961 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি রূপরেখা বা মডেল তৈরি করেন। কিছু পরিমাণ সংশোধনের পর তা প্রয়াগ করা হয়। যা নেহেরু মহলানবিশ মডেল নামে পরিচিত।
(i)জন সাধারণের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে জাতীয় আয় (25 শতাংশ) বৃদ্ধি করা ।
(ii) ভারী শিল্প ও যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে শিল্পায়নের গতি বৃদ্ধি করা।
(iii) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
(iv) কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটানো।
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব→
(i) জাতীয় আয় (8 শতাংশ) বৃদ্ধি পায়।
(ii) ভারতের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কে বলা হয়ে থাকে, এটি শিল্প ও লেনদেন সংক্রান্ত পরিকল্পনা। এই সময়কালে ভারতে যন্ত্রপাতির বিভিন্ন অংশ এবং কৃষি যন্ত্রপাতির উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
(iii) এই পরিকল্পনায় খাদ্য শস্যের উৎপাদন (15 শতাংশ) বৃদ্ধি পায়।
(iv) ভারী শিল্প গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে দুর্গাপুর, রাওকেল্লা ও ভিলায়েতে তিনটি স্পট কারখানা গড়ে তোলা হয়।
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য→ (1961-66 খ্রিস্টাব্দ)
(i) বার্ষিক 5 শতাংশ হারে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা।
(ii) কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এবং খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে কৃষকদের স্বনির্ভরতা বাড়ানো।
(iii) দেশের মানব সম্পদ কে যথাযথ ব্যবহার করা ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করা।
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব→ এইপরিকল্পনার সময় ও বহুমুখী পরিকল্পনা গৃহীত হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর সুফল পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র যানবাহন, পর্ণ লেনদেন ও সামাজিক পরিষেবা মূলক ক্ষেত্ৰ গুলিতে কিছু উন্নয়ন দেখা দিয়েছিল।
অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনের হার কমেছিল 10 মেট্রিক টনের মতো। খাদ্য সামগ্রীর ও ভোগ্য সামগ্রীর দাম উচ্চহারে বৃদ্ধি পেয়েছিল আসা তিত শিল্প উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল।
এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম কিছু কারণ হলো―
(১) চীনের ভারত আক্রমণ (1962)
(২) ভারত-পাক যুদ্ধ (1956-66)
(৩) ব্যাপক খরা(1965)
প্রভৃতি ঘটনা এই ব্যার্থতার জন্য বহুল অংশেয় দায়ী।