ভূমিকা→ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে এক প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একটি প্রজাতান্ত্রিক প্রতিষ্টিত হয়। এই সরকারের নানা কাজকর্মে চীনের সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাছাড়া বিংশ শতকের শুরুতে তিনি বিদেশিদের আধিপত্য ও বিদেশীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া বিভিন্ন অসম চুক্তি,বিদেশী পণ্য, প্রভৃতির বিরুদ্ধে দেশ প্রেমিক চীনাদের ক্রমাগত ক্ষোপ জমতে থাকে যার ফল স্বরূপ চীনের জাতীয়তাবাদী ও বুদ্ধিজীবী মানুষেরা ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ঠা মে যে প্রতিবাদ আন্দোলন এর আয়োজন করেছিল তা ইতিহাসে ৪ঠা মে নামে পরিচিত।
আন্দোলনের কারণ→
৪ঠা মে আন্দোলন ইতিহাসে কোনো আপসিক ঘটনা নয় কালের নিয়মে অসন্তোষে বারুদে অগ্নিফুঙ্গে সংস্পর্শে জ্বলে ওঠা এক বাস্তব অগ্নিকাণ্ড। এই প্রচলনের মূলে বেশ কয়েকটি কারণ বর্তমান ছিল সেগুলি হল নিম্নরূপ।
(১) উয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা→ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে চীনের সামগ্রিক নেতা উয়ান-সি-কাই রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে চিনে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে তিনি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলির কাছ থেকে কয়েকটি শর্তে ঋণ নেওয়ার কথা বলেন। যারা বিরোধিতা করেন তাদের তিনি নৃশংসভাবে হত্যা করেন। যা চীনের জনগণকে ক্রুদ্ধ করে।
(২) কুয়ো-মিং-তাং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা→ উয়ান-সি-কাই এর এই অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে কুয়ো-মিং-তাং দল ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে আন্দোলনের ডাক দিলে বিদ্রোহীদের কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম হয়। এবং কুয়ো-মিং-তাং দল নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে। ফলে চীনের জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়।
(৩) ২১ দফা দাবির প্রতিবাদ→ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে জাপান শান-টুং প্রদেশ থেকে জার্মান বাহিনীকে বিতারিত করে। সেখানে নিজেদের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সমগ্র চীনকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করতে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জাপান চীনের কাছ থেকে ২১ দফা দাবি পেশ করেন। যা স্বাধীন চীনের পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল।
(৪) বিদেশি পণ্যের বাজার→ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চীনে বিদেশী পণ্যের প্রবেশ যথেষ্ট কমে যায়। এই সময় চীনে জাতীয় শিল্পের কিছু বিকাশ ঘটে। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর চীনের অভ্যন্তরে আবার জাপানসহ অন্যান্য পুঁজিপতি দেশগুলি বাজার দখলের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে ফলে চীনে নতুন গড়ে ওঠা শিল্পগুলি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। এবং অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়।
প্রত্যক্ষ কারণ→ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রপক্ষের হয়ে যুদ্ধ করে জয়লাভ করার পর চীনের আশা ছিল বিদেশিদের কাছ থেকে চীন তার রাজবংশ ফেরত পাবে। সে কারণে প্যারিসে শান্তি সম্মেলনে চীন জাপানের ২১ দফা দাবি সহ সব অসম চুক্তি এবং শান-টুং প্রদেশে জাপানের কৃতিত্ব বাতিলের দাবি জানায়। কিন্তু ইউরোপিয় কতৃত্ব কথায় কর্ণপাত না করায় চীনের প্রতিনিধিরা শূন্য হাতে ফিরে আসে। ফলে চীনের জনগণ ক্ষোভে ফেটে যায় পরে। এই পরিস্থিতিতে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন-তু-সিউ এর ডাকে হাজার হাজার ছাত্র ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ঠা মে সমাবেত হয়ে বিক্ষোপ প্রদর্শন করে।
গুরুত্ব ও ফলাফল→
(১) সরকারের নতিস্বীকার→ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাপে চীন সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। আন্দোলনের চাপে সরকার বাধ্য হয়ে ধৃত ছাত্রদের ছেড়ে দেয় এবং ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষর করবেনা বলে ঘোষণা করেন।
(২) কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা→ এই আন্দোলনের ফলে চীনে কুয়ো-মিং-তাং দলের পুনর্গঠন করা হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান ঘটে।
(৩) ব্যাপকতা→ ৪ঠা মে আন্দোলনের প্রভাব ছিল চীনের সর্বত্র এবং গণ ভিত্তি ছিল ব্যাপক।
(৪) সাংস্কৃতিক অগ্রগতি→ চীনের বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে এই আন্দোলন নতুন যুগের সূচনা করেছিল। চীনের বহু বইপত্র,পত্র পত্রিকা প্রকাশিত হলে সংস্কৃতির অগ্রগতি ঘটে। চীনের পুরনো মতাদর্শের পরিবর্তে নতুন সংস্কৃতিকে সবাই স্বাগত জানায়।
মন্তব্য→
চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছিল ৪ঠা মে আন্দোলনের প্রধান প্রাপ্তি। এই আন্দোলনের সময় উল্লেখযোগ্য দুটি সংবাদপত্র চেন-তু-সিউ সম্পাদিত নবতাড়িন্ন,জ্ঞানের আলো। চীনা ঐতিহাসিক হো-কাং-চি এর মতে "৪ঠা মে আন্দোলন নতুন বিপ্লবী ঝড়ের জন্ম দেয় এবং চীনের বিপ্লব এক নতুন স্তরে পৌছে দেয়।