প্রশ্ন:-
বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা বলতে কী বোঝো?
অথবা
বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা কিভাবে সংরক্ষিত হয়?
ভূমিকা→ আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ সংবিধান বিরোধী কোন আইন বা আদেশ জারি করলে সেই আইন বা আদেশকে বিচার বিভাগ বিচার বিশ্লেষণ করে সংবিধান বিরোধী বলে মনে করলে,তাকে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে বাতিল বলে ঘোষণা করতে পারে। বিচার বিভাগের এই ক্ষমতা কে 'বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা' বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সুপ্রিম কোর্টের হাতে এই ক্ষমতা আছে।
সংরক্ষণের উপায়→ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার উপরে গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সেগুলি হল-
(১) বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি→ বিচারপতিগণের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা অনেকাংশে নির্ভর করে তাদের নিয়োগ পদ্ধতির উপর। নিয়োগ পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত যাতে বিচারকগণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুচিন্তিত, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মতামত জন্য প্রদানের জন্য শাসন বিভাগ অথবা আইনসভার দ্বারা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত বা বাধাপ্রাপ্ত না হন। অবসর গ্রহণের পর তারা যেন অন্য কোনো রাজনৈতিক চাকরি গ্রহণ না করতে পারে তার ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেজন্য তাদের অবসরকালীন ভাতা যেন যথেষ্ট হয় তা ব্যবস্থা করা উচিত।
(২) কার্যকাল ও স্থায়িত্ব→ বিচারকদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা উচিত। কার্যকালের স্থায়িত্ব না থাকলে বিচারকগণের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করা সম্ভব হয়না। বিচারকগণ যত বেশিদিন স্বপদে থাকবেন ততই তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে।
(৩) অপসারণের পদ্ধতি→ কার্যকাল শেষ হওয়ার পরে সামান্য কারণে বিচারকের পদ থেকে অপসারণ করার ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়। যখন তখন অপারেশনে ভয় থাকলে বিচারকদের পক্ষেরম ন্যায় বিচার করা সম্ভব হয় না।
(৪) বেতন ও ভাতা→ উপযুক্ত ব্যক্তি যাতে বিচারকের পদে নিযুক্ত হতে পারেন। এবং সর্বপ্রকার দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেন। তার জন্য বিচারকদের উপযুক্ত পরিমাণে বেতন ও ভাতা দেওয়া উচিত। তা না হলে সুযোগ পেলে বিচারকগণ নানাপ্রকার অসৎ আচরণে প্রবৃত্ত হবেন।
(৫) বিচার বিভাগের পৃথককরণ→ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ থেকে পৃথক রাখতে হবে। বিচারকগণ যাতে বিচারকার্যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে পারেন সেজন্য তাদের শাসন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ থেকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখা উচিত।
উপসংহার→ উপযুক্ত ব্যবস্থা গুলির দারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব হয়। তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বিচারকগণ সব সময় ন্যায় বিচার করতে পারেন না। কারণ বিচারকগণ কে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার কার্য সম্পাদন করতে হয়। কোনো আইন অন্যায় মূলক হলেও বিচারক গণকে কার্য ক্ষেত্রে ওই আইন কে প্রয়োগ করতেই হয়।