প্রশ্ন:-
'ছাতির বদলে হাতি' গদ্যে শােষক - শােষিতের যে ছবি ফুটে উঠেছে তার উল্লেখ করাে।
অথবা
শ্রেণিবৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থার যে পরিচয় 'ছাতির বদলে হাতি' রচনাংশে ফুটে উঠেছে, তা আলােচনা করাে।
1×5=5
উত্তর:-
ভূমিকা→
'ছাতির বদলে হাতি' প্রবন্ধে সুভাষ মুখােপাধ্যায় অবিভক্ত বঙ্গসমাজের শােষণক্লিষ্ট, শ্রেণিবৈষম্যমূলক কিছু খণ্ডচিত্রের উল্লেখ করেছেন। মহাজন, জমিদার, জোতদার, তালুকদার, তহশিলদার প্রমুখদের শাসন, কখনও ব্রিটিশ সিংহের দাপট কখনও বা নানকার প্রথার মতাে নানারকম দমনপীড়নজনিত প্রথা গারাে পাহাড়ে বসবাসকারী সাধারণ মানুষদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল।
জ্বলন্ত উদারহন→
প্রবন্ধের শুরুতে শােষণের উদাহরণ পাওয়া যায় চেংমান নামে এক গারাে চাষির কাহিনিতে। হতভাগ্য চেংমান হালুয়াঘাট বন্দরে মনমােহন মহাজনের দোকানের ঝাপির নীচে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিলে মহাজন তাকে এক নতুন ছাতা দিয়ে সাহায্য করে। নগদ পয়সা না নিয়ে ধারে দেওয়া ছাতার দাম মহাজন না নিলেও, কয়েকবছর পর হঠাৎ একদিন চেংমানকে ধরে মহাজন ছাতার পাওনা দাম চায়। চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ - সহ সে ছাতার দাম তখন হাজারখানেক টাকা, অর্থাৎ যা প্রায় একটা হাতির দামের সমান।
শাসন - শোষণের চিত্র→
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'দুই বিঘা জমি' কবিতার উপেনের মতােই ডালু, হাজংদেরও বংশানুক্রমিক এই শােষণের পাল্লায় পড়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। একদিকে মনমােহন, কুটিশ্বর সাহার মত মহাজনদের সুকৌশলী চক্রান্ত, যা বংশপরম্পরায় ঋণ চুকিয়ে শাসন চলতে বাধ্য করে। অন্যদিকে স্বমহিমায় রয়েছে জমিদাররা, তার পাওনা না মেটালে চাষি ঘরে ধান তুলতে পারে না। চুক্তির ধান, কর্জার ধান এবং হাজার রকম বাজে আনুষঙ্গিক কর মিটিয়ে শেষপর্যন্ত চাষিরা সারাবছরের পরিশ্রমের পরও খালি হাতে ঘরে ফেরে।
নানকারাদি প্রথা→
এর সঙ্গে সেখানে ছিল নানকার ও নানা কুপ্রথা। নানকার প্রজাদের জমিতে স্বত্ব থাকে না। জমির আম - কাঠালেও তাদের অধিকার থাকে না। জমি জরিপে আড়াই টাকা পর্যন্ত খাজনা ধার্য হয়। খাজনা না দিতে পারলে কাছারিতে আটক, পিছমােড়া বেঁধে মার, মালঘরে আটক, সম্পত্তি নিলাম করা হয়। মহাজনরা কর্জা ধানে এক মণে দু - মণ সুদ নেয়।
এভাবে প্রতিনিয়ত পীড়িত, ভীত, দুঃখী দরিদ্র কৃষক ও সাধারণ প্রজাদের দিনযাপনের ছবি পাঠ্য রিপােটার্জে পাওয়া যায়।